শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করবে সরকার

বাংলাদেশের আইন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধের প্রতি দেশের দায়বদ্ধতা বারবার আলোচনায় এসেছে। শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছে, যার কারণে এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, সরকার বিদেশে পালিয়ে থাকা পলাতক আসামিদের ধরতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ইন্টারপোলের রেড নোটিশ

রেড নোটিশ একটি আন্তর্জাতিক পুলিশ সতর্কতা, যার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে আটক করতে দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা করা হয়। ইন্টারপোলের মাধ্যমে একটি রেড নোটিশ জারি হলে, সদস্য দেশগুলো সেই ব্যক্তির খোঁজ ও আটক করতে পারবে। বাংলাদেশ সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য পলাতক আসামিদের ধরতে খুব শিগগিরই রেড নোটিশ জারি করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে শেখ হাসিনা এবং অন্যান্য পলাতক ব্যক্তিদের যেখানেই থাকুক না কেন, তাদেরকে আন্তর্জাতিক আদালতের সামনে হাজির করা হবে। ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)-এ এই গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দাখিল হয়। কিন্তু সেই সময় থেকেই পলাতক আসামিরা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংস্কার

এছাড়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভবনের সংস্কার কাজও চলছে। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার করেছে। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালের ভবনটির সংস্কার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ভবনটির সংস্কারের কাজ তদারকি করছেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা, এবং এতে প্রায় শতাধিক কর্মী কাজ করছেন।

অবশ্য, আইসিটি ভবনের সংস্কারের কারণে আপাতত বিচারিক কার্যক্রম একটি অস্থায়ী ভবনে চলছে। এই বিচার কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানের হবে, এমনভাবে ভবনটি প্রস্তুত করা হচ্ছে।

আইসিসির অভিযোগ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদা

এছাড়া, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) করা অভিযোগের বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, এই অভিযোগ দেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে। তিনি দাবি করেন যে, এটি একটি ভিত্তিহীন অভিযোগ, যা আইসিসি প্রসিকিউশন অফিসে একটি সাধারণ পিটিশন হিসেবে দাখিল করা হয়েছে। তার মতে, এটি কোনো মামলা নয়, বরং একটি প্রচারণা যার মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

অপরদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে, যদি সরকার তাদের নির্দেশনা দেয়।

ফ্যাসিস্ট চক্র এবং বাংলাদেশের জনগণ

আসিফ নজরুল আরও জানান, এইসব অভিযোগ ফ্যাসিস্ট চক্রের একটি পরিকল্পনা, যা বাংলাদেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য এবং তাদের নিজেদের রক্ষায় প্রচারণার অংশ। এই অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে, বিশেষত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি), এই অভিযোগের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সরকার এই ধরনের মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার

২০১৩ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ, শরণার্থী হিসেবে দেশত্যাগ ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়। তার পর থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, এবং সাজার মুখোমুখি হয়েছেন অনেক যুদ্ধাপরাধী।

এখন, সেই একই কারণে ১৯৭১ সালের গণহত্যা মামলায় পলাতক আসামিদের ধরতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হচ্ছে। এতে প্রমাণিত হবে যে, বাংলাদেশ যেকোনো অপরাধীর বিচার করবে এবং কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

এতদিনে কি হতে পারে?

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের সরকার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, তা বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করবে এবং আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের অবস্থা সুদৃঢ় করবে। তবে এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মঞ্চে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে না হয়ে বরং এটি বাস্তবায়িত হলে শুধু দেশের জনগণের জন্যই নয়, আন্তর্জাতিক অপরাধীদের জন্যও একটি বড় বার্তা হয়ে উঠবে।

যে কোনও মূল্যে, শেখ হাসিনা এবং অন্যান্য পলাতক আসামিদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে বাংলাদেশ সরকার প্রস্তুত।

বাংলা নিউজ বিডি হাব/ জাকির হাসান

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Scroll to Top