বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে এক তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, “আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই।” এই বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ এবং ‘শপথ ভঙ্গের শামিল’ বলে উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল, যিনি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আজ সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের কারণে তার পদে থাকার উপযুক্ততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি রাষ্ট্রপতি নিজের বক্তব্যে অটল থাকেন, তাহলে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে নিয়ে যাওয়া হবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের পিছনে তথ্য
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেছেন, “আমি পদত্যাগপত্রের কোনো কপি পাইনি।” অন্যদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় একাধিকবার বলেছেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি। কিন্তু সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সংবাদমাধ্যমে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর নিশ্চিত করেছেন।
বিবেকের ডাক
এখন প্রশ্ন উঠছে, তাহলে সত্যিই কি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন? তিনি নিজেও কিছুদিন আগে বলেছিলেন যে, তিনি পদত্যাগ করেননি এবং যে কোনো সময় দেশে ফিরবেন। এর ফলে সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের পর বিষয়টি আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাষ্ট্রপতির দ্বিমুখী বক্তব্য
গত ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এখন রাষ্ট্রপতি বলছেন, তার কাছে কোনো প্রমাণ নেই। এটি সমাজে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। অনেকেই মনে করছেন, রাষ্ট্রপতি এই বক্তব্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
ছাত্র আন্দোলন এবং জনমত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা রাষ্ট্রপতির এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তারা দাবি করছেন, রাষ্ট্রপতি যা বলেছেন, তা অযৌক্তিক। ছাত্র নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, “হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে, তাই পদত্যাগপত্রের কোনো ভূমিকা নেই।”
এছাড়া, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির অভিযোগ করেছেন যে, রাষ্ট্রপতি অতীতে যুবলীগ ও আওয়ামী লীগে যুক্ত ছিলেন এবং এখন পরিস্থিতি জটিল করার চেষ্টা করছেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল মো. জাহিদুল ইসলাম রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করেছেন।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেছেন, “বর্তমান রাষ্ট্রপতি শেখ হাসিনার দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত এবং এখনও তার হয়ে কাজ করছেন।” তিনি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দাবি করেছেন যে, বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে সরানো উচিত।
সমাজে আলোচনার ফল
এই বিতর্ক বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। সাধারণ জনগণ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিচ্ছেন। তবে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের পর জনগণের মধ্যে যা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা যে কোনও সময় প্রকট হতে পারে।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে যেহেতু ব্যাপক আলোচনা চলছে, তাই রাজনৈতিক অঙ্গনে এই বিষয়টি আরো জোরদার হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। পরিস্থিতি যেনো আরও জটিল হয়ে না দাঁড়ায়, সেজন্য রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ এবং আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
বাংলা নিউজ বিডি হাব/ রনি মিয়া