আমাদের জীবনে শব্দ দূষণ একটি গুরুতর সমস্যা। প্রতিদিন আমরা যে পরিবেশে বাস করি, সেখানে শব্দ দূষণ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সম্প্রতি এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়তে হলে শব্দ দূষণ কমাতে হবে। আসুন, আমরা জানি কীভাবে শব্দ দূষণ আমাদের ক্ষতি করছে এবং এর সমাধান কী হতে পারে।
শব্দ দূষণের প্রভাব
শব্দ দূষণ আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে আমাদের কানে এবং মস্তিষ্কে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যখন আমরা অত্যधिक শব্দে থাকি, তখন তা আমাদের মনোযোগ হারাতে, ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে এবং এমনকি উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগও সৃষ্টি করতে পারে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “যদি আমরা অপ্রয়োজনীয় হর্ন বাজানো বন্ধ করি, তাহলে অনেক মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারব।”
সড়কে শব্দ দূষণ
রাস্তা চলাচলের সময় আমাদের অনেক সময় গাড়ির হর্ন শুনতে হয়। অধিকাংশ গাড়ি রেড লাইট থেকে গ্রিন লাইটে যাওয়ার সময় হর্ন বাজাতে থাকে। এটি একটি অত্যন্ত বিরক্তিকর বিষয়। সৈয়দা হাসান বলেছেন, “হর্ন বাজানোর আগে আমাদের ভাবতে হবে, এটি জরুরি কি না?” বাস, ট্রাক, ও অন্যান্য গাড়ির চালকদের উচিত কম শব্দ করা। এটি শুধু নিজেদের জন্য নয়, বরং পাশে থাকা অন্যদের জন্যও প্রয়োজন।
শিশুদের স্বাস্থ্য
শিশুরা যখন স্কুলে যায়, তখন তাদের পরিবহণে অনেক শব্দ হয়। বিশেষ করে রিকশার শব্দ তাদের কান ও স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। সৈয়দা হাসান এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন যে, “বাচ্চাদের জন্য আমাদের বেশি সচেতন হওয়া উচিত।”
ইসলাম ধর্মের শিক্ষ
ইসলাম ধর্মে উচ্চস্বরে কথা বলা নিষেধ। ধর্মে বলা হয়েছে, আমাদের কথা বলার সময় নিচু স্বরে কথা বলা উচিত। এটি সামাজিক পরিবেশের জন্যও ভালো। আমাদের উচিৎ মানুষের বিরক্তির কারণ না হওয়া। অধিক শব্দে কথা বলার মাধ্যমে আমরা শক্তিশালী হতে পারি না; বরং যুক্তিপূর্ণ কথা বলার মাধ্যমেই আসল শক্তি প্রকাশ পায়।
পরিবর্তনের সময়
আমরা যদি ব্যক্তিগত পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে পারি, তাহলে সমাজে ও রাষ্ট্রে পরিবর্তন আনা সম্ভব। শব্দ দূষণ কমাতে হলে প্রথমে আমাদের নিজেদের অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব হলো শব্দ দূষণ কমাতে সচেতন থাকা।
শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ
সাম্প্রতিক প্রশিক্ষণে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এই প্রশিক্ষণে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের পরিচালকও বক্তব্য দেন। তারা সবাই শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
সঠিক পথে চলুন
আমাদের সবাইকে একসাথে শব্দ দূষণ কমানোর জন্য কাজ করতে হবে। যদি আমরা আমাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে পারি, তবে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তাই আসুন, আমরা সচেতন হই এবং শব্দ দূষণ কমানোর জন্য কাজ করি।
শেষ কথা
শব্দ দূষণ থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের সবার একত্রিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এটি শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের জন্য নয়, বরং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও। একটি নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়তে হলে আমাদের শব্দ দূষণ কমাতে হবে। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই কাজে সামিল হই।