শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, দেশটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ভোট গণনার সময় কারফিউ জারি হওয়ার ঘটনা জনমনে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। চলুন, বিস্তারিতভাবে জানি এই নির্বাচনের প্রেক্ষাপট, বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে।
ভোট গণনা ও কারফিউ: কেন জরুরি ছিল?
শুক্রবার রাত ৮টার দিকে ভোট গণনার কাজ শুরু হয়। কিন্তু হঠাৎ করে স্থানীয় পুলিশ অগ্নি সংযোগ ও সহিংসতার সম্ভাবনা এড়াতে ৮ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, “জনসাধারণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে” এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, এবারের নির্বাচনকে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে “সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ” হিসেবে অভিহিত করেছে নির্বাচন কমিশন। এ সময় ভোট পড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ, যা একটি ইতিবাচক সূচক।
২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ধসে পড়ার পর দেশে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান হয়। তখনকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ত্যাগ করেন এবং রনিল বিক্রমাসিংহে পদ গ্রহণ করেন। এই পরিবর্তনের ফলে জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি অসন্তোষ তৈরি হয়, বিশেষ করে রাজাপাকসে পরিবারের ওপর। তাই এবারের নির্বাচনে জনগণের প্রত্যাশা ছিল নতুন নেতৃত্বের খোঁজে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি ছাড়াও প্রধান দুই চ্যালেঞ্জার হলেন সাজিথ প্রেমাদাসা ও অনুরা কুমারা দিশানায়েক। সাজিথ প্রেমাদাসা, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রেমাদাসার পুত্র, ২০১৯ সালে হেরেছিলেন গোতাবায়ার কাছে। অনুরা কুমারা দিশানায়েক বামপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত। এদের মধ্যে যেকোনো একজন বিক্রমাসিংহেকে হারাতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
রবিবার ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কোনো প্রার্থীর একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়াতে পারে। এর ফলে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে, যা দেশটির ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের অর্থনৈতিক সংকট দেশকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাব দেখা দিয়েছে। জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং এটি গণঅভ্যুত্থানের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নির্বাচনের পর যে নতুন সরকার দায়িত্ব নেবে, তাকে এই সংকট মোকাবেলার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ মনোযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই বৈঠক থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন রাজনৈতিক পরিবর্তনের একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। একটি সফল নির্বাচনের পর দেশটি একটি নতুন দিগন্তে প্রবেশ করতে পারে। জনগণের আস্থা অর্জন এবং অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করে সরকারকে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বর্তমান পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে নতুন সরকারের গঠন হবে দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।