শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ন্যাশনাল পিপল’স পাওয়ার (এনপিপি)-র নেতা অনুরা কুমারা দিসানায়েক শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত অবস্থানে আছেন। ২০২২ সালের অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতার পর এই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোটগ্রহণে যেভাবে এগিয়ে আছেন দিসানায়েক, তা দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাচনের প্রেক্ষাপট: একটি পরিবর্তনের সূচনা
শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। ২০২২ সালে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়ে এবং এর ফলে গণঅভ্যুত্থান ঘটে। তখনকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশের দায়িত্ব ছেড়ে পালিয়ে যান। এর পর প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করেন। ফলে এই নির্বাচনের সময় জনগণের মধ্যে একটি নতুন নেতৃত্বের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
ভোটগ্রহণের তথ্য: যেমন ছিল ?
শনিবার, স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়। ২২টি জেলার ১৩,৪০০ বুথে ভোট পড়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ, যা ২০১৯ সালের নির্বাচনের তুলনায় কিছুটা কম। সে সময় ভোট পড়েছিল ৮৩ শতাংশ। নির্বাচনে দিসানায়েক ৭ লাখ ২৭ হাজার ভোট পেয়েছেন, যা মোট ভোটের ৫২ শতাংশ। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন ৩ লাখ ৩৩ হাজার ভোট, মাত্র ২৩ শতাংশ। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে পেয়েছেন ২ লাখ ৩৫ হাজার ভোট, ১৬ শতাংশ।
কারফিউ জারি: নিরাপত্তার জন্য জরুরি পদক্ষেপ
ভোট শেষে সন্ধ্যায় পুলিশ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা এড়াতে ৮ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করে। পুলিশের মতে, “জননিরাপত্তার স্বার্থে” এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের পরে এমন পরিস্থিতি অনেকটা উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন শেষে।
দিসানায়েকের সাফল্য: কারা তাঁর সঙ্গে?
দিসানায়েক ২২টি জেলার মধ্যে ২১টি জেলায় পোস্টাল ব্যালটে জয়ী হয়েছেন। এনপিপি সূত্র জানাচ্ছে, দলটি রবিবার প্রেসিডেন্সিয়াল সেক্রেটারিয়েটে যাবে। 2020 সালের সংসদীয় নির্বাচনে এনপিপি মাত্র ৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ছিল, কিন্তু এই নির্বাচনে তাদের প্রার্থী দিসানায়েকের পারফরম্যান্স তাদের জন্য আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বৈশ্বিক ও স্থানীয় প্রেক্ষাপট: নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়া
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫৬ বছর বয়সী দিসানায়েক শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের চেয়ে এগিয়ে আছেন। এই নির্বাচনে দিসানায়েকের মার্কসবাদ-প্রবণ জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জেপিভি) দলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাচনের নতুন আইন: কীভাবে নির্ধারিত হবে বিজয়ী?
নতুন নির্বাচনী আইনের মাধ্যমে ভোটাররা তিনটি প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। যদি কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ বা তার বেশি ভোট পান, তবে তিনি বিজয়ী হন। অন্যথায়, সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফার (রান-অফ) ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
রাজনৈতিক অঙ্গনের ভবিষ্যৎ: কী হতে পারে পরবর্তী পদক্ষেপ?
দিসানায়েকের সম্ভাব্য জয় শ্রীলঙ্কার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। বর্তমান সংকট মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা তার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হবে। তাঁর দল এনপিপি রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের জন্য অধিকতর সমর্থন, কম কর এবং কঠোর বাজার অর্থনৈতিক নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার নতুন অধ্যায়
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নতুন রাজনৈতিক পটভূমি তৈরি করছে। অনুরা কুমারা দিসানায়েকের সম্ভাব্য জয় দেশের জন্য নতুন সুযোগ এনে দিতে পারে, কিন্তু এই নতুন যাত্রা সহজ হবে না। জনগণের আশা ও প্রত্যাশা পূরণের জন্য তাকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।