আজ ৫ সেপ্টেম্বর, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক মাস পূর্ণ হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া এই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর, ৮ আগস্ট একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। তবে, বিভিন্ন কারণে আন্দোলনের রেশ এখনও কাটেনি। চলুন আমরা বিস্তারিতভাবে জানি, কীভাবে পরিস্থিতি পাল্টেছে এবং এখন কী অবস্থায় আছি।

বর্তমান পরিস্থিতি

সরকার পতনের পর, বাংলাদেশে নানা অরাজকতার ঘটনা ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন অংশে লুটপাট, চাঁদাবাজি, এবং দখলদারির ঘটনা বেড়ে গেছে। প্রশাসন, পুলিশ, এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জোর করে পদত্যাগ করানোর ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব অরাজকতার কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। যদিও কিছু সমস্যা কমেছে, পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি শান্ত হয়নি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলন

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলস্বরূপ, শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। এই আন্দোলনকে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বড় গণ-অভ্যুত্থান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এত বড় অভ্যুত্থান আর বাংলাদেশের ইতিহাসে দেখা যায়নি, আর এত প্রাণহানি অতীতে কখনো ঘটেনি।

প্রাণহানির সংখ্যা ও বিচার

সরকারিভাবে নিহতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, নিহতের সংখ্যা হাজারের বেশি হতে পারে। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে সাবেক মন্ত্রী, এমপি এবং পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জাতীয় শোক দিবস

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়নি। ওই দিন প্রতিবিপ্লবের আশঙ্কা থাকলেও ছাত্র-জনতা তা রুখে দেয়। এখনো বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিবিপ্লবের আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত এক মাসে গোপালগঞ্জ ছাড়া দেশের অন্য কোথাও প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের কোনো আন্দোলন দেখা যায়নি।

শেখ হাসিনার শাসনকালের অবসান

শেখ হাসিনার পদত্যাগের মাধ্যমে তাঁর টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনে বিপুল ভোটে ক্ষমতায় এসে তিনি দীর্ঘদিন শাসন করেন। তবে, তাঁর শাসনামলে আর কোনো গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন হয়নি।

আন্দোলনের কারণ ও প্রতিক্রিয়া

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শেখ হাসিনার সরকারের কর্মকাণ্ডের কারণে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল সেই ক্ষোভের প্রকাশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেছেন, “নতুন প্রজন্ম যে বাংলাদেশ চায়, সবাইকে সেই বাংলাদেশকে স্বাগত জানাতে হবে। আমরা একটি আইনের শাসনের দেশ চাই। জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের ছাড় দেওয়া হবে না।”

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারমূলক কাজ

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি, এবং অর্থপাচারের বিরুদ্ধে সংস্কারমূলক কাজ শুরু করেছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা এবং ঋণের নামে ব্যাংক লুটের সুযোগ দেওয়ার মতো বিষয়গুলোর ওপর নজর দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকও করেছেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার জানিয়েছেন, ৬ সেপ্টেম্বর থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরে সফর শুরু করবেন। তাদের উদ্দেশ্য হলো জনগণের মতামত সংগ্রহ করা এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া। তারা সব ধরনের চাঁদাবাজি, দখলদারির বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রেখেছে।

আজকের পরিস্থিতি এবং সাম্প্রতিক আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই পরিবর্তনগুলো সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে এবং ভবিষ্যতে দেশের উন্নয়নের পথপ্রদর্শক হতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে, এই পরিস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের জন্য অনেক কিছু শেখার আছে।