ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ হওয়া কারণ

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo

বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার, যার নেতৃত্বে মুহাম্মদ ইউনূস রয়েছেন, আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। এটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। গত ২৩ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ছাত্রদের মধ্যে একটি নতুন আশা ও আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে।

ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ হওয়া: কারণ ও প্রতিক্রিয়া

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পেছনে সরকারের মূল কারণ ছিল বিভিন্ন অভিযোগ, যা তারা দীর্ঘদিন ধরে সহ্য করেছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে—হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। এর ফলে শত শত নিরপরাধ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো, এই নিষেধাজ্ঞার পর ছাত্র আন্দোলন কীভাবে এগোবে? এই নিষিদ্ধকরণের ফলে ছাত্ররা তাদের নিরাপত্তা এবং অধিকার নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে শুরু করেছে। রংপুর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দ মিছিল বের করেছে, যা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ এবং স্বাধীনতার চেতনা প্রকাশ করছে।

ছাত্রলীগের অতীত: গৌরব থেকে অন্ধকারে

১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ছাত্রলীগ এক সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বাধিকারের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ছাত্রলীগের কার্যক্রম পরিবর্তিত হয়ে গেছে। বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরের শাসনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। যেমন, হত্যা, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করা। এসব কারণে তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তারা পাঁচ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা। আন্দোলনের নেতা মেহেদী সজীব বলেন, “ছাত্রলীগের এই দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।” তাদের দাবি, ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের অন্যান্য সংগঠনগুলোও নিষিদ্ধ করা উচিত।

রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা

ছাত্রলীগের নিষিদ্ধকরণের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন পরিবর্তনের আশা জেগেছে। এখন সাধারণ মানুষ এবং ছাত্ররা রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি জানাতে পারে। কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, এই পরিবর্তনগুলো দেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। তবে, প্রশ্ন হলো, এই পরিবর্তন কতটুকু স্থায়ী হবে? তা সময়ই বলবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা

এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আলোচনা শুরু হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকরা তাদের বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে সমাজে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং আন্দোলনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে।

ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। এটি শুধু ছাত্রদের জন্য নয়, বরং দেশের ভবিষ্যতের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপে ছাত্ররা নিজেদের অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে। তাদের নতুন দাবিগুলো যদি সরকার মেনে নেয়, তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক landscape পরিবর্তিত হতে পারে।

বাংলা নিউজ বিডি হাব/ জহিরুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।