সাবেক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) শনিবার, ২৪ আগস্ট, ভোরে সিলেটের কানাইঘাট থানায় হস্তান্তর করেছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আদালতে নিয়ে আসা হচ্ছে। তবে, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি। কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, সাবেক বিচারপতিকে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

এর আগে, শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাতে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে সিলেটের কানাইঘাট (দনা) সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় বিজিবি আটক করে। আটক করার পর তাকে বিজিবি ক্যাম্পে রেখে কিছু সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং রাত ১২টার দিকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, সাবেক বিচারপতি মানিক একটি গামছা দিয়ে গলায় বাঁধা অবস্থায় আছেন এবং তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজের নাম ও বাড়ির ঠিকানা জানান। ভিডিওতে তিনি জানান, তার কাছে ব্রিটিশ ও বাংলাদেশি পাসপোর্ট, কিছু ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং নগদ অর্থ ছিল।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদে, মানিক বলেন যে, ভারতে পালানোর জন্য তার কাছে ১৫ হাজার টাকার চুক্তি ছিল এবং তাকে সীমান্ত পার করার জন্য একদল যুবক সাহায্য করতে এসেছিল। কিন্তু সেই যুবকেরা তাকে মারধর করে তার কাছে থাকা ৬০-৭০ লাখ টাকা এবং মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। পরে, তাকে কলার পাতার ওপর শুইয়ে রেখে পালিয়ে যায়।

বিতর্ক এবং অতীতের কাণ্ড

সাবেক বিচারপতি মানিক দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে, যা তার বিচারপতির জীবনকে বেশ আলোচিত করেছে। ২০১৫ সালে, মানিক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সাথে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন, যা বিচারপতি সিনহা তার বেঞ্চ থেকে সরিয়ে দেন। এর আগে, ২০১২ সালে বিমানের বিজনেস ক্লাসে সিট না পাওয়ায় লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে আদালত অবমাননার নোটিশ জারি করেছিলেন মানিক।

তিনি বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন, যার ফলে তার বিরুদ্ধে নিন্দা এবং সমালোচনা হয়েছে। ২০১৩ সালে, তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে পদোন্নতি পান, কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর কারণে এই পদোন্নতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

সমসাময়িক ঘটনা এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়া

সম্প্রতি, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে সরকারি বাড়িভাড়া পরিশোধ না করার বিষয়ে দুদককে নোটিশ দেয়া হয়। এর সাথে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সাথে সম্পর্কিত ভিডিওগুলো ব্যাপকভাবে শেয়ার হচ্ছে এবং নানা প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিচ্ছে।

এখন, সাবেক বিচারপতি মানিককে কড়া নিরাপত্তায় সিলেট আদালতে নিয়ে আসা হচ্ছে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

 

FAQ

১. সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক কেন গ্রেপ্তার হন?

বিজিবি তাকে অবৈধভাবে ভারত যাওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে।

২. কবে এবং কোথায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়?

২৩ আগস্ট রাতের দিকে সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

৩. কেন তিনি ভারতে পালাতে চেষ্টা করেছিলেন?

তিনি প্রশাসনের ভয়ে এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন।

৪. তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়েছে কি?

সাবেক বিচারপতির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি।

৫. তার গ্রেপ্তারের পর তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে?

গ্রেপ্তারের পর তাকে সিলেটের কানাইঘাট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে এবং কড়া নিরাপত্তায় আদালতে নিয়ে আসা হচ্ছে।

৬. ভিডিওতে তার সাথে কী দেখা গেছে?

ভিডিওতে দেখা যায় যে, তিনি গামছা দিয়ে গলায় বাঁধা অবস্থায় আছেন এবং নিজের পরিচয় জানান।

৭. গ্রেপ্তারের পর তার সাথে কী আচরণ করা হয়েছে?

তার সাথে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আচরণ করা হয়েছে এবং কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হচ্ছে।

৮. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বিষয়ক কী প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার গ্রেপ্তার নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া ও ভিডিও ব্যাপকভাবে শেয়ার হচ্ছে।

৯. শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের অতীত বিতর্ক কী কী?

তিনি বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে মন্তব্য এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছেন।

১০. তার গ্রেপ্তারের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে?

বিজিবি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং আদালত তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।