ভারত থেকে নেমে আসা ঢল এবং টানা বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রংপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চলের অনেক বাড়িতে পানি উঠেছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে এবং নদীপাড়ের হাজারো মানুষ বন্যা ও ভাঙনের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
পানির উচ্চতা
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ৫২.১৭ সেন্টিমিটার। এটি বিপৎসীমার (৫২.১৫ সেন্টিমিটার) ০.০২ সেন্টিমিটার উপরে। পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কর্তৃপক্ষ ৪৪টি গেট খুলে রেখেছে। অন্যদিকে, কাউনিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহের উচ্চতা ছিল ২৯.৪৭ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা
রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা এবং লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধাসহ অনেক স্থানে পানি প্রবেশ করেছে। এতে বেশ কিছু পরিবারের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এবং বোরো ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।
উত্তরাঞ্চলের নদ-নদী ও বিলের পানি বাড়ছে, ফলে বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। বিভিন্ন শাকসবজি এবং ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে, যা কৃষকদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি।
স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা
কিসামত চরের কৃষক দুলাল ইসলাম (৩৫) বলেন, “আজ ভোর থেকে আমাদের বাড়িতে নদীর পানি ঢুকতে শুরু করেছে। আমরা নিরাপদ জায়গায় চলে যাচ্ছি।” সোনাখুলি এলাকার কৃষক জয়নাল হোসেন (৫০) জানান, “গ্রামটি তিস্তা ব্যারেজের নিচে হওয়ায় পানি বাড়লেই আমাদের বন্যা হয়। আজ সকালে ঘরের ভেতর নদীর পানি ঢুকেছে।”
ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী বলেন, “আমার ইউনিয়নের তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। অনেক ফসলের ক্ষেতে পানি উঠেছে।”
আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর বিভাগে অতি ভারী বৃষ্টির প্রবণতা কমেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বাড়তে পারে এবং পরবর্তী দুই দিন তা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এই সময়ের মধ্যে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম
ডালিয়া পাউবোর প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন জানান, “উজানের ঢল এবং বর্ষণের কারণে তিস্তায় পানির প্রবাহ বেড়েছে। সকাল থেকে পানি বিপদসীমার নিচে ছিল, কিন্তু রাত ১১টার দিকে বিপদসীমার ওপরে চলে যায়। তাই সব জলকপাট খুলে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।”
সামগ্রিক অবস্থা
এখন নদীপাড়ের মানুষজন বন্যার আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, যাতে কোনো বিপদ ঘটলে আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
শেষ কথা
এখন সময় বন্যা মোকাবেলার। নদীর পানি ও বৃষ্টির কারণে মানুষদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে ক্ষতির পরিমাণ কমে আসে এবং মানুষ নিরাপদে থাকতে পারে।