যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোনালাপ করেছেন। এই ফোন কলটি ছিল ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের পরিস্থিতি নিয়ে। ট্রাম্প পুতিনকে ইউক্রেনে যুদ্ধ আরও না বাড়ানোর এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এর ফলে, বিশ্বের রাজনীতিতে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে এবং ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের গুরুত্বপূর্ণ দিক
গত বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ডোনাল্ড ট্রাম্প ফ্লোরিডায় তার মার-এ-লাগো রিসোর্টে থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এর সাথে ফোনে কথা বলেন। এই ফোন কলটি ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ঘটে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প পুতিনকে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ আরও বাড়ানো থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তিনি শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার ওপর জোর দিয়েছেন। তবে, এই ফোনালাপের ব্যাপারে ট্রাম্প বা তার দলের পক্ষ থেকে কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
ট্রাম্পের ইউক্রেন নিয়ে মতামত
ট্রাম্পের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সহায়তা দিতে যেভাবে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে, তাতে কোনো বাস্তবিক উপকারিতা নেই। তিনি মনে করেন, এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটানোর জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এর আগে, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা বলেন এবং ওই সময়ও তিনি যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তির জন্য আহ্বান জানান।
এদিকে, ইউক্রেনের সরকার বলেছে, তারা ট্রাম্প এবং পুতিনের মধ্যে ফোনালাপের ব্যাপারে আগে থেকে কিছু জানত না। ট্রাম্পের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চিউং বলেছেন, “আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের মধ্যে ব্যক্তিগত কথোপকথনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবো না।”
বাইডেনের আশঙ্কা
এদিকে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার পরবর্তী প্রশাসন এবং কংগ্রেসকে ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখার জন্য অনুরোধ করেছেন। বাইডেনের উপদেষ্টা জেইক সালিভান জানিয়েছেন, বাইডেন ট্রাম্পকে এই বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দেবেন, যে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে পরিত্যাগ করলে তা ইউরোপে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। তিনি আরও বলেন, বাইডেনের কাছে এখন ৭০ দিন সময় রয়েছে, যাতে তিনি কংগ্রেস এবং নতুন প্রশাসনকে বুঝিয়ে ইউক্রেনের জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখতে পারেন।
ট্রাম্পের সমালোচনা
ট্রাম্প ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা নিয়ে নানান প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, ইউক্রেনের জন্য এই বিশাল সাহায্য যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক নয়। তার মতে, ইউক্রেনকে কিছু অঞ্চল ছেড়ে দিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে, যা পুতিন-এর জন্য গ্রহণযোগ্য হবে। তবে ইউক্রেন এই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বাইডেন কখনোই এমন কোনো পরামর্শ দেননি।
ট্রাম্পের বিজয় ও পরবর্তী পদক্ষেপ
৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস কে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী ২০ জানুয়ারি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। তার পরবর্তী সরকারের ক্ষেত্রে ইউক্রেনের জন্য মার্কিন নীতির কী পরিবর্তন আসবে, তা নিয়ে অনেকেই আলোচনা করছেন।
বাইডেন এবং ট্রাম্পের মধ্যে একাধিক বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বিশ্ব রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বিশেষ করে, ইউক্রেনের বিষয়টি ট্রাম্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে, কারণ তিনি এর আগে ইউক্রেনের জন্য সহায়তার পরিমাণ কমানোর পক্ষে মতামত দিয়েছেন।
এখন ইউক্রেনের ভবিষ্যত কী?
এখন, বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে: ইউক্রেনের যুদ্ধের ভবিষ্যত কী হবে? ট্রাম্প যদি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তাহলে কি ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সহায়তা কমানো হবে? এমন পরিস্থিতিতে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং তার সরকারের জন্য এটা একটি কঠিন সময় হতে পারে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা এখন পর্যন্ত ট্রাম্প এবং পুতিনের ফোনালাপের বিষয়ে কোনো সরকারি ঘোষণা পায়নি। তবে ট্রাম্পের এই ফোন কল ইউক্রেনের যুদ্ধের ভবিষ্যতের দিকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসতে পারে।
ট্রাম্প এবং পুতিনের ফোনালাপ মার্কিন এবং রাশিয়ান সম্পর্কের পরবর্তী অধ্যায়ের দিকে ইঙ্গিত দেয়। যদিও ট্রাম্প ইউক্রেনের ব্যাপারে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে, তার সহায়তার পরিমাণ কমানোর সিদ্ধান্ত যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে তা ইউক্রেনের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
বাইডেন এবং ট্রাম্পের পরবর্তী সিদ্ধান্ত ইউক্রেন এবং বিশ্বের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এখন সবার চোখে রয়েছে, কীভাবে এই নতুন প্রশাসন ইউক্রেনের সমস্যার সমাধান করতে চলেছে।