উচ্চতা অনুযায়ী ওজন শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা শুধু একটি ফ্যাশন নয়, এটি আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন এটি আমাদের শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয় এবং নানা ধরনের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আবার, ওজন যদি স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়, তাহলেও বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের উচিত স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
উচ্চতা অনুযায়ী ওজন
উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নির্ধারণ করা স্বাস্থ্যকর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিটি ব্যক্তির জন্য তাদের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন জানা প্রয়োজন, কারণ এটি সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। ডাক্তাররা বলেন, উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ঠিক রাখা মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য জরুরি। আপনি যদি আপনার উচ্চতা অনুযায়ী ওজন সম্পর্কে নিশ্চিত না হন, তাহলে একটি পুষ্টিবিদ সঙ্গে পরামর্শ করা ভালো। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, উচ্চতা অনুযায়ী ওজন সঠিকভাবে মেনে চললে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কমে।
উচ্চতা | পুরুষের ওজন (কেজি) | মহিলাদের ওজন (কেজি) |
---|---|---|
৪ ফুট ৭ ইঞ্চি | ৪০ – ৫৮ | ৩৬ – ৫৫ |
৫ ফুট ১ ইঞ্চি | ৪৮ – ৬০ | ৪৫ – ৫৭ |
৫ ফুট ২ ইঞ্চি | ৫০ – ৬০ | ৪৬ – ৫৮ |
৫ ফুট ৩ ইঞ্চি | ৫১ – ৬৩ | ৪৮ – ৬১ |
৫ ফুট ৪ ইঞ্চি | ৫২ – ৬৬ | ৪৮ – ৬৩ |
৫ ফুট ৫ ইঞ্চি | ৫৫ – ৬৮ | ৫০ – ৬৫ |
৫ ফুট ৬ ইঞ্চি | ৫৬ – ৭০ | ৫৩ – ৬৭ |
৫ ফুট ৭ ইঞ্চি | ৫৭ – ৭২ | ৫৪ – ৬৯ |
৫ ফুট ৮ ইঞ্চি | ৬০ – ৭৪ | ৫৬ – ৭১ |
৫ ফুট ৯ ইঞ্চি | ৬৩ – ৭৬ | ৫৭ – ৭২ |
৫ ফুট ১০ ইঞ্চি | ৬৫ – ৭৯ | ৫৯ – ৭৩ |
৫ ফুট ১১ ইঞ্চি | ৬৭ – ৮১ | ৬১ – ৭৫ |
৬ ফুট ০ ইঞ্চি | ৬৯ – ৮৩ | ৬৩ – ৭৭ |
৬ ফুট ১ ইঞ্চি | ৭১ – ৮৫ | ৬৫ – ৭৯ |
৬ ফুট ২ ইঞ্চি | ৭৩ – ৮৭ | ৬৭ – ৮১ |
দেহের ওজন এবং স্বাস্থ্য
শরীরের ওজন এবং স্বাস্থ্য একে অপরের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত। সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে আমাদের দেহের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন, কোমরের মাপ এবং বয়সের সাথে ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করা জরুরি। বিশেষ করে ২৫ বছর বয়সের পর থেকে আমাদের ওজন কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, তা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক।
উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন
উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন নির্ধারণ করা একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্য ও জীবনযাপনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক আদর্শ ওজন বজায় রাখা স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়। প্রত্যেক মানুষের শারীরিক গঠন ও উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন ভিন্ন হতে পারে, তাই এটি জানা প্রয়োজন। চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদরা উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন নির্ধারণে বিভিন্ন সূত্র ব্যবহার করেন, যা মানুষকে তাদের স্বাস্থ্যকর লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। এজন্য, আপনার উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে তা অর্জন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
উচ্চতা | ওজন সীমা |
---|---|
৪ ফিট ২ ইঞ্চি | ২৯.৮ – ৩৭ কেজি |
৪ ফিট ৩ ইঞ্চি | ৩১.৩ – ৩৮.৮ কেজি |
৪ ফিট ৪ ইঞ্চি | ৩২.২ – ৪০ কেজি |
৪ ফিট ৫ ইঞ্চি | ৩৩.৭ – ৪১.৯ কেজি |
৪ ফিট ৬ ইঞ্চি | ৩৪.৭ – ৪৩.১ কেজি |
৪ ফিট ৭ ইঞ্চি | ৩৬.৩ – ৪৫ কেজি |
৪ ফিট ৮ ইঞ্চি | ৩৭.৩ – ৪৬.৩ কেজি |
৪ ফিট ৯ ইঞ্চি | ৩৯ – ৪৮.৩ কেজি |
৪ ফিট ১০ ইঞ্চি | ৪০ – ৪৯.৭ কেজি |
৪ ফিট ১১ ইঞ্চি | ৪১.৬ – ৫১.৭ কেজি |
৫ ফিট | ৪২.৭ – ৫৩.১ কেজি |
৫ ফিট ১ ইঞ্চি | ৪৪.৪ – ৫৫.২ কেজি |
৫ ফিট ২ ইঞ্চি | ৪৫.৬ – ৫৬.৬ কেজি |
৫ ফিট ৩ ইঞ্চি | ৪৭.৪ – ৫৮.৮ কেজি |
৫ ফিট ৪ ইঞ্চি | ৪৯.২ – ৬১.১ কেজি |
৫ ফিট ৫ ইঞ্চি | ৫০.৪ – ৬২.৬ কেজি |
৫ ফিট ৬ ইঞ্চি | ৫২.২ – ৬৫ কেজি |
৫ ফিট ৭ ইঞ্চি | ৫৩.৫ – ৬৬.৪ কেজি |
৫ ফিট ৮ ইঞ্চি | ৫৫.৪ – ৬৮.৮ কেজি |
৫ ফিট ৯ ইঞ্চি | ৫৬.৭ – ৭০.৪ কেজি |
৫ ফিট ১০ ইঞ্চি | ৫৮.৬ – ৭৩ কেজি |
৫ ফুট ১১ ইঞ্চি | ৬০ – ৭৪.৫ কেজি |
৬ ফুট | ৬২ – ৭৭ কেজি |
৬ ফুট ১ ইঞ্চি | ৬৩.৩ – ৭৮.৭ কেজি |
৬ ফুট ২ ইঞ্চি | ৬৫.৪ – ৮১.৩ কেজি |
অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতার ঝুঁকি
বিশ্বব্যাপী ১৯৭৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে স্থূলতার হার প্রায় তিনগুণ বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, বিএমআই (বডি ম্যাস ইনডেক্স) ২৩ বা তার বেশি হলে তা অতিরিক্ত ওজন হিসেবে গণ্য হয়। আর বিএমআই ৩০ বা তার বেশি হলে সেটি স্থূলতা হিসেবে পরিচিত। অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার কারণে বিভিন্ন মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন:
- হৃদরোগ
- ডায়াবেটিস (টাইপ ২)
- উচ্চ রক্তচাপ
- বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার
- হাঁপানি
এছাড়া, পেটের বাড়তি মেদও মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
কম ওজনের স্বাস্থ্য সমস্যা
অন্যদিকে, যদি আমাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়, তাও নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। যেমন:
- পুষ্টিহীনতা
- রক্তশূন্যতা
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
- হাড়ের দুর্বলতা
একজন সুস্থ মানুষ যদি স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ও নিয়মিত শরীরচর্চা করে, তাহলে তার ওজন কিছুটা কম হলেও তা সাধারণত সমস্যা নয়।
উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন নির্ধারণ
সুস্থ জীবনযাপনের জন্য আমাদের জানার প্রয়োজন উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন কত হওয়া উচিত। আন্তর্জাতিকভাবে বডি ম্যাস ইনডেক্স (বিএমআই) দিয়ে এটি নির্ধারণ করা হয়। বিএমআই ১৮.৫ থেকে ২৪.৯ এর মধ্যে হলে সেটিকে স্বাভাবিক ওজন বলা হয়। এশিয়ার মানুষদের ক্ষেত্রে বিএমআই ২৩ এর বেশি হলে বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বিএমআই কী?
বিএমআই (বডি ম্যাস ইনডেক্স) হলো আমাদের ওজন এবং উচ্চতার ভিত্তিতে একটি সূচক, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের ওজনের স্বাভাবিকতা যাচাই করতে পারি। বিএমআই হিসাবের জন্য নিম্নলিখিত সূত্রটি ব্যবহার করা হয়:
বিএমআই=ওজন (কেজি)উচ্চতা (মিটার)2\text{বিএমআই} = \frac{\text{ওজন (কেজি)}}{\text{উচ্চতা (মিটার)}^2}
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিএমআই ১৮.৫ এর নিচে হলে তা ‘অস্বাভাবিক কম ওজন’, ১৮.৫ থেকে ২৪.৯ এর মধ্যে হলে তা ‘স্বাভাবিক ওজন’, ২৫ থেকে ২৯.৯ এর মধ্যে হলে ‘অতিরিক্ত ওজন’ এবং ৩০ বা তার বেশি হলে ‘স্থূলতা’ নির্দেশ করে।
কোমরের মাপ এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি
শরীরের কোমরের মাপও স্বাস্থ্য ঝুঁকি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের জন্য কোমরের মাপ ৩১.৫ ইঞ্চি (৮০ সেমি) এবং পুরুষদের জন্য ৩৭ ইঞ্চি (৯৪ সেমি) এর নিচে রাখা উচিত। এই সীমা অতিক্রম করলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
কোমরের মাপ কীভাবে নিতে হয়?
সঠিক কোমরের মাপ নেওয়ার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
- কোমরের হাড়ের সবচেয়ে উঁচু পয়েন্ট খুঁজে বের করুন।
- বড় করে শ্বাস নিন এবং স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস ছাড়ুন।
- কোমরের চারপাশে মাপার ফিতা পেঁচিয়ে মাপ নিন।
ওজন কমানোর কার্যকর পদ্ধতি
ওজন কমানোর জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত শরীরচর্চা। বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল এবং পূর্ণশস্য খাবারের মধ্যে রাখা উচিত। এছাড়া, ফ্যাট ও চিনিযুক্ত ক্যালরিবহুল খাবারের পরিমাণ কমিয়ে এনে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করা উচিত।
স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা
- সবুজ শাকসবজি
- ফলমূল
- ডাল
- বাদাম
- পূর্ণ শস্য (যেমন লাল চাল)
দৈনন্দিন অভ্যাসে ছোটো ছোটো পরিবর্তন
- জিমে না গিয়ে সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন দ্রুত হাঁটুন।
- শরীরচর্চার জন্য বিভিন্ন কার্যকলাপে অংশ নিন, যেমন দৌড়ানো বা সাইকেল চালানো।
শেষ কথা
সুস্থ জীবনযাপনে ওজন নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। এটি শুধু আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। তাই আমরা যদি আমাদের শরীরের ওজন স্বাভাবিক সীমায় রাখি, তাহলে নানা রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায় এবং জীবনযাত্রা অনেক সহজ হয়ে যায়। আমাদের উচিত স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ও নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে আমাদের ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।
সুতরাং, এখন থেকেই সচেতন হন এবং নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবুন। একটি সুস্থ জীবনযাপনের জন্য আজই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন!