সকালে খালি পেটে কি খেলে মোটা হওয়া যায়

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo

ওজন কম বা বেশি— দুইভাবেই এর প্রভাব আপনার স্বাস্থ্য এবং জীবনের ওপর পড়তে পারে। অতিরিক্ত ওজন যেমন নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে আসে, তেমনি স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনও নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বাড়ানো জরুরি। এই পোস্টে, আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো কোন খাবারগুলো ওজন বাড়াতে সাহায্য করে, কোন ব্যায়ামগুলো কার্যকরী এবং কোন বিষয়গুলো সতর্কতার সাথে অনুসরণ করা উচিত।

ওজন বাড়ানোর ডায়েট চার্ট: স্বাস্থ্যকর খাবার

ওজন বাড়ানোর জন্য একটি সুস্থ ও সুষম ডায়েট পরিকল্পনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ওজন কমানোর পাশাপাশি, স্বাস্থ্যের উন্নতি করার জন্য সঠিক খাবার নির্বাচন করা প্রয়োজন। এখানে আমরা আলোচনা করব স্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে ওজন বাড়ানোর একটি কার্যকরী ডায়েট চার্ট সম্পর্কে।

সকালে খালি পেটে কি খেলে মোটা হওয়া যায়

সকালের নাস্তা:

  • দুধ: দুধ শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি-১২ এবং প্রোটিন যা হাড় ও দাঁত মজবুত করতে এবং রক্তের চাহিদা পূরণে সাহায্য করে। সকালের নাস্তার পাশাপাশি দিনভর যে কোন সময়ে দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • কলা: কলায় রয়েছে ভিটামিন বি-৬ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ফাইবার যা হজমে সহায়তা করে। কলা সহজলভ্য এবং প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যুক্ত করা খুবই সহজ।
  • ডিম: ডিমকে ‘প্রকৃতির মাল্টিভিটামিন’ বলা হয় কারণ এতে বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। ডিমের মধ্যে ভিটামিন-এ, ভিটামিন বি২ এবং জিংক রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ত্বক সুস্থ রাখে।
  • খেজুর: খেজুরে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং ফলিক এসিড। এটি হজমে সাহায্য করে এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়। সকালে কয়েকটি খেজুর খেলে ওজন বৃদ্ধি পাবে।

এই খাবারগুলো প্রতিদিনের সকালের নাস্তায় যুক্ত করা যেতে পারে। যেকোনো একটি বা দুটি খাবার নিয়মিত খেলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

দুপুরের খাবার:

  • ডাল: ডাল অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। এতে প্রোটিন, আয়রন, পটাসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে। এই সব উপাদান শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। ঘন ডাল খাওয়া preferable।
  • টক দই: টক দই দুধের পুষ্টিগুণের সাথে প্রোবায়োটিক উপাদানও দেয়। এটি পেটের উপকারী জীবাণুগুলোকে সমৃদ্ধ করে এবং হজমে সাহায্য করে। মিষ্টি দই এড়িয়ে চলা উত্তম।
  • মুরগির মাংস: মুরগির মাংসে প্রোটিন এবং মিনারেল থাকে যা শরীরের মাংসপেশি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গরু বা খাসির মাংসের তুলনায় এটি স্বাস্থ্যকর।

রাতের খাবার:

দিনের অন্যান্য খাবারের মতো রাতের খাবারে একই ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার যুক্ত করুন। ব্যস্ততার কারণে যদি দুপুরে কিছু বাদ পড়ে যায়, তবে তা রাতের খাবারে গ্রহণ করতে পারেন।

সকালে খালি পেটে হালকা নাস্তা

হালকা নাস্তা বা স্ন্যাকস:

  • বাদাম: বাদামে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবার রয়েছে যা ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। চিনিসহ বাদাম না খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • কিসমিস: কিসমিসে অনেক ভিটামিন এবং মিনারেল রয়েছে যা শরীরের জন্য উপকারী। এটি দাঁতের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই বাদাম বা টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া উত্তম।
  • বিভিন্ন ধরনের বীজ: মিষ্টিকুমড়ার বিচি, সূর্যমুখীর বিচি, তিসির বীজ, তিলের বীজ—এই সব বীজগুলো ভাত বা তরকারিতে যুক্ত করলে পুষ্টি বাড়বে।

ওজন বৃদ্ধিতে পরিহার্য খাবার:

  • সাগু: সাগু শুধুমাত্র শর্করা সমৃদ্ধ, এতে প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেল কম থাকে।
  • কাস্টারড-পুডিং: এতে অতিরিক্ত চিনি থাকে যা স্বাস্থ্যকর নয়। চিনি ছাড়া কাস্টারড বা পুডিং তৈরি করলে খাওয়া যেতে পারে।

ওজন বাড়ানোর ব্যায়াম: কার্যকরী স্ট্রেংথ ট্রেনিং

ওজন বাড়াতে স্ট্রেংথ ট্রেনিং বা শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম অত্যন্ত কার্যকর। এটি শরীরের মাংসপেশি বাড়ায় এবং অতিরিক্ত ক্যালরি খাওয়ার ফলে শরীরে চর্বি জমার সম্ভাবনা কমায়। কিছু কার্যকরী ব্যায়াম:

  • Pushup
  • Pullup
  • Plank
  • Squat

ওজন বাড়ানোর জন্য সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করা উচিত। যদি শারীরিক সুস্থতার জন্য ব্যায়াম অভ্যাস না থাকে, তবে ধীরে ধীরে শুরু করুন।

ওজন বাড়ানোর পূর্বে কিছু সতর্কতা:

  • ওজন কম হওয়ার কারণ বুঝুন: কিছু রোগ যেমন থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়াবেটিস বা মানসিক সমস্যা ওজন কমাতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
  • খাওয়ার পরিমাণ পরিবর্তন: খাবারের পরিমাণ ও ধরণ পরিবর্তনের সাথে সাথে পানি এবং পানিজাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়ান। গ্যাসের সমস্যা এড়াতে খাবার ধীরে ধীরে বাড়ান।
  • নিজে ওষুধ খাওয়া এড়ানো: মোটা হওয়ার জন্য কোনো ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। একজন রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ান।

বিভিন্ন খাবার যা ওজন বাড়াতে সহায়তা করবে:

  • ফলের জুস: বাজারের জুসে অনেক শর্করা থাকে যা ক্যালরি বাড়াতে সহায়ক।
  • বাদাম: প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে।
  • শুকনো ফল: খেজুর, কিশমিশ, আমণ্ড ইত্যাদি শুকনো ফল নিয়মিত খেলে ওজন বাড়বে।
  • পিনাট বাটার: পিনাট বাটারে উচ্চ ক্যালরি ও প্রোটিন থাকে, এটি পাউরুটির সাথে খাওয়া যেতে পারে।
  • স্মুদি: ফলের জুস, দুধ, দই, আইসক্রিম একত্রে মিশিয়ে স্মুদি তৈরি করা যেতে পারে।
  • সালাদ: সালাদের মধ্যে বাদাম, মাছ, মাংস ইত্যাদি যোগ করে ক্যালরি বাড়ানো যায়।
  • গমের রুটি: সকালের নাস্তায় গমের রুটি খাওয়া ভালো।

শারীরিক গঠন অনুসারে খাবারের প্রভাব ভিন্ন হতে পারে। খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এনে প্রয়োজনীয় ওজন বাড়ানো সম্ভব।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।