আক্কেল দাঁত ওঠা, যাকে পেরিকরোনাইটিস নামেও পরিচিত, একটি সাধারণ সমস্যার নাম। এটি প্রায়ই অস্বস্তিকর এবং ব্যথাযুক্ত হতে পারে। সাধারণত ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে আক্কেল দাঁত ওঠার সময়, এটি চারপাশের মাড়ি দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে, যা অপারকুলাম নামে পরিচিত। যখন আক্কেল দাঁত সঠিকভাবে ওঠতে না পারে, তখন মাড়ির চারপাশের টিস্যু ফুলে গিয়ে সংক্রমিত হয়ে যায়, যার ফলে ব্যথা ও অস্বস্তি সৃষ্টি হয়।

আক্কেল দাঁত ওঠার লক্ষণ এবং চিকিৎসা

আক্কেল দাঁত কি?

মুখের একদম শেষ দিকে ওপরে ও নীচে দুইপাশের মোট ৪টি দাঁত আক্কেল দাঁত হিসেবে পরিচিত। সাধারণত ১৮-২৫ বছর বয়সের মধ্যে এগুলো ওঠে। এই দাঁতগুলো সাধারণত সবচেয়ে বড় হয় এবং অনেক সময় মুখে ৩২টি দাঁত ধরার জায়গা না থাকলে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।

আক্কেল দাঁতের ব্যথার কারণ

আক্কেল দাঁতের ব্যথার কারণ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাহমুদা আক্তার জানান, আক্কেল দাঁত ওঠার সময় প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং মাড়ি ফুলে যায়। এই ফোলাভাব গাল ও গলার দিকেও ছড়িয়ে যেতে পারে। অনেক সময় এটি টনসিলের ব্যথা বা মামস হিসেবে ভুল হতে পারে।

আক্কেল দাঁত ওঠার লক্ষণ

  • ব্যথা ও ফোলাভাব: আক্কেল দাঁতের চারপাশে ব্যথা এবং ফোলাভাব অনুভূত হতে পারে।
  • মুখ খুলতে সমস্যা: মুখ খোলার সময় অসুবিধা বা ব্যথা হতে পারে।
  • খাবার খেতে অসুবিধা: খাওয়ার সময় সমস্যা হতে পারে।
  • কান ও মাথায় ব্যথা: আক্কেল দাঁতের কারণে কান ও মাথার অংশে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।
  • মুখে দুর্গন্ধ: মাড়িতে সংক্রমণ হলে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হতে পারে।
  • গলায় লিম্ফ নোড ফোলা: গলার লিম্ফ নোড ফুলে যেতে পারে।
  • জ্বর ও অসুস্থতা: গুরুতর ক্ষেত্রে জ্বর ও সাধারণ অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।

আক্কেল দাঁতের চিকিৎসা

১. লবণ ও গরম পানি দিয়ে কুলকুচি: যদি সংক্রমণের সন্দেহ থাকে, তাহলে দিনে চার-পাঁচবার লবণ ও গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করা উচিত। এটি সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

২. ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ: একটি ডেন্টাল সার্জনের কাছে পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এবং জটিলতা সৃষ্টি হয়, তাহলে আক্কেল দাঁতের জন্য পাশের মাড়ির দাঁতগুলোর উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।

৩. জীবাণুমুক্তকরণ: প্রথমে আক্কেল দাঁতের চারপাশের মাড়ি স্যালাইন ওয়াশ দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয় অথবা পভিডন আয়োডিন দিয়ে ওয়াশ করা হয়।

৪. ব্যথানাশক ওষুধ: যদি মাড়ি ফুলে না যায়, তবে শুধুমাত্র ব্যথার জন্য ব্যথানাশক ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে।

৫. দাঁত পরিষ্কার করা: ডেন্টাল সার্জন আক্রান্ত স্থানে দাঁতের চারপাশে আটকে থাকা ধ্বংসাবশেষ বা ব্যাকটেরিয়া অপসারণ করতে পারেন।

৬. অপারকুলেকটমি: একটি বিশেষ মাইনর সার্জারি, যার মাধ্যমে অপারকুলাম লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়, যাতে আক্কেল দাঁত সহজে উঠতে পারে।

৭. আক্কেল দাঁত তোলা: বারবার বা গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে, ডেন্টাল সার্জন মাইনর সার্জারির মাধ্যমে আক্কেল দাঁত অপসারণের পরামর্শ দিতে পারেন।

পরামর্শ

ডা. হাসিনা আক্তার বেগ (ওরাল ও ডেন্টাল সার্জন, ফরাজী ডায়াগনসিস সেন্টার ও হাসপাতাল, বারিধারা, ঢাকা) বলেন, আক্কেল দাঁত ওঠার সময় প্রচণ্ড ব্যথা সহ্য করতে হয় এবং খাবার চিবানো ও গিলতেও কষ্ট হয়। অনেক সময় ব্যথানাশক ওষুধ খেতে হয়, এবং অসহ্য যন্ত্রণা হলে সার্জারি পর্যন্ত করতে হয়।

ঘরোয়া উপায়

১. লবণ পানিতে কুলকুচি: লবণ পানি দিয়ে কুলি করলে ব্যথা কমে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াও মরে যায়।

২. পিপারমিন্ট: পিপারমিন্টের নির্যাস মাড়িতে লাগালে ব্যথা কমে।

৩. ক্লোভ অয়েল: লবঙ্গ তেল ব্যবহার করে ব্যথা কমানো যেতে পারে।

৪. অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরা জেল মাড়িতে লাগালে ব্যথা কমে এবং ফোলাভাব কমে।

শেষ কথা

আক্কেল দাঁতের সমস্যার ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। ব্যথা ও সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে দন্তবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা, মুখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করলে আক্কেল দাঁতের সমস্যা কমানো সম্ভব।