
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা মো. আসিফ নজরুলের সামনে, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে কারাগারে থাকা প্রবাসীরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রদর্শন করেন।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ভবনের বিজয় ৭১ হলে এই প্রবাসীদের প্রত্যেকের হাতে ৫০ হাজার টাকার আর্থিক অনুদানের চেক হস্তান্তরের আয়োজন করা হয়। উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্যের এক পর্যায়ে প্রবাসীরা হট্টগোল করে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত তৎকালীন কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেনকে গ্রেফতারের দাবি জানান এবং ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান। হট্টগোলের সময় উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে দুবাই থেকে ফেরত এক প্রবাসী মঞ্চে এসে আসিফ নজরুলের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ওই দেশে আমাদের সন্ত্রাসী বানিয়েছে। এর দায়িত্বে রয়েছেন কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন। অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করা উচিত। তিনি আমিরাত সরকারকে চিঠি দিয়ে আমাদের গ্রেফতার করতে বলেছেন। তাকে গ্রেফতার করা হলে সব তথ্য পাওয়া যাবে।
বিক্ষুব্ধ প্রবাসীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শান্ত থাকুন। সে আমার কথা শোনে, তারপর যত খুশি চিৎকার করে। বুঝলাম, তোমার রাগ করার কারণ আছে। আগামীকাল বিকাল ৩টায় মন্ত্রণালয়ে ৭ জনের একটি প্রতিনিধি দল আমার সঙ্গে দেখা করবে। আগামীকাল মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হবে, কার অভিযোগ শুনাবে, দেখব।
এরপর আসিফ নজরুল বক্তব্য বন্ধ করে মঞ্চে বসেন। এরপর প্রবাসীরা আরও উত্তেজিত হয়ে তার কাছে এসে দাবি জানাতে থাকে, এক পর্যায়ে তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এসময় প্রবাসীরা ‘বিচার চাই, বিচার চাই’, ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন।
অনুষ্ঠানে বিএম জামালকে গ্রেফতারের দাবি জানান প্রবাসীরা। তাদের মতে, এই কূটনীতিককে দেশে ফেরত জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব তথ্য পাওয়া যাবে। দুবাই কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের প্রতি তাদের বিরোধিতার অভিযোগ করেননি। এই প্রবাসীদের বিরুদ্ধে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অভিযোগ আনা হয়। এ জন্য তাদের যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এ সময় ওই প্রবাসী উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘এমন কর্মকর্তার পদোন্নতি কেন, যে আমাদের বিদেশে জঙ্গি বানায়? আমি 35 বছর ধরে কাজ করে যা অর্জন করেছি তা হারিয়েছি। আমার মতো অনেকেরই কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
প্রবাসীদের অভিযোগ, অভিযুক্ত কর্মকর্তা বিএম জামাল হোসেন আওয়ামী লীগের লোকজনের সহায়তায় হাজার হাজার ভিসা বিক্রি করেছেন। রিমান্ডে সেদেশে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগও করেন তারা।
এক পর্যায়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা শান্ত থাকার অনুরোধ করছি। দয়া করে শান্ত হোন।’ পরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের দাবি জানান প্রবাসীরা।
অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগের আগে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি কাতারে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রবাসীরা আমাকে বলেছেন দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তার আচরণ বৈরী ছিল। এভাবে কথা না বলে (উপস্থিত লোকদের উদ্দেশে) আপনি বিশেষভাবে বলেন যে, তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ রয়েছে। আপনি অভিযোগ দায়ের করলে আমরা তদন্ত করতে পারি। পরে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারি। অভিযোগ না দিলে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।’