বর্তমান সময়ে ফ্যাটি লিভার, বা ‘হেপাটিক স্টেটোসিস’, একটি অনেক বড় স্বাস্থ্যে সমস্যা যেখানে যকৃতে চর্বি জমা হতে শুরু করে। সাধারণভাবে যকৃতে কিছু পরিমাণ চর্বি থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু অতিরিক্ত চর্বি জমলে তা নানা স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। ফ্যাটি লিভার দুই ধরনের হতে পারে: অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার এবং নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার।

অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার এমন পরিস্থিতি যেখানে অ্যালকোহল নিয়মিতভাবে সেবন করা হয়, যা লিভারের চর্বি জমার প্রধান কারণ। অপরদিকে, নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত চিনি, কার্বোহাইড্রেট, প্রসেসড ফুড এবং অতিরিক্ত মসলাদার খাবারের কারণে হয়ে থাকে। এই প্রবন্ধের মধ্যে জানব, ফ্যাটি লিভারের কারণ,  লক্ষণ, পদক্ষেপ, এবং  ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়।

ফ্যাটি লিভারের কারণ ও লক্ষণ

ফ্যাটি লিভার কেন হয়?

  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত চিনি, কার্বোহাইড্রেট, প্রসেসড ফুডের কারণে।
  • বিভিন্ন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ: দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করলে।
  • ডায়াবেটিস ও উচ্চ কোলেস্টেরল: রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে।
  • বংশগত কারণ: নির্দিষ্ট বয়সের পর।

ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা:

  • টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগী।
  • মেনোপজ শুরু হয়েছে এমন নারীরা।
  • স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন।
  • উচ্চ কোলেস্টেরল।
  • দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।

ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ: 

  • অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের ফলে হজমে সমস্যা।
  • খাবার সময় বমি বমি ভাব।
  • পেট ফুলে যাওয়া।
  • শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও ফুলে যেতে পারে।
  • হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া।
  • মাথাব্যথা, ডিপ্রেশন বা মন খারাপ।

ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়

ফ্যাটি লিভার থেকে বাচতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন:

  • অ্যালকোহল বাদ দিন: অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার থাকলে এটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।
  • দুধের প্রকারাবলী কমান: ঘন দুধের তৈরি খাবার এবং কনডেন্সড মিল্ক বাদ দিন।
  • ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার: খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
  • ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: ফাইবার আপনার হজমে সহায়ক, ক্ষুধার অনুভূতি কমায় এবং পেট ভরা রাখে।
  • সবুজ শাকসবজি: যেমন বিটরুট, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, শিম, ব্রকলি।
  • উন্নত মানের প্রোটিন: চর্বিহীন মাছ, মুরগির চামড়া ছাড়া এবং সীমিত পরিমাণে গরুর মাংস।
  • দৈনিক ফলমূল: মৌসুমী ফল, টক দই ও নন-ফ্যাট মিল্ক।

কি খাবেন না:

  • ভাজাপোড়া খাবার: উচ্চ তাপমাত্রায় ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • অতিরিক্ত লবণ: দৈনিক ২,৩০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ গ্রহণ করবেন না।
  • সহজ শর্করা: সাদা ভাত, ময়দার রুটি, পাস্তা কম খান।
  • রেড মিট: গরু বা খাসির মাংস কম খান।

লাইফস্টাইল পরিবর্তন:

  • ওজন কমান: অতিরিক্ত ওজন কমানো ফ্যাটি লিভার সমস্যার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • প্রতিদিন ব্যায়াম: নিয়মিত ১৫-২০ মিনিট ব্যায়াম করুন।
  • চিনির পরিমাণ কমান: চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলুন।

ঘরোয়া প্রতিকার:

  • পুদিনা, লেমনগ্রাস ও আদার পানীয়: এই উপাদানগুলো লিভার সুরক্ষায় সহায়ক।
  • প্রতিদিন হাঁটুন: সকালে এক ঘণ্টা হাঁটুন।

ফ্যাটি লিভার: পরিণতি ও ঝুঁকি

ফ্যাটি লিভার সাধারণত শুরুতে কোনো লক্ষণ প্রকাশ নাও করতে পারে, তবে এটি পরবর্তীতে হেপাটাইটিস বা লিভারের প্রদাহের দিকে যেতে পারে। যদি সময়মতো চিহ্নিত না করা হয়, এটি সিরোসিস বা ক্যানসারে রূপ নিতে পারে।

পরিষ্কারভাবে ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ এবং মুক্তির উপায় জানলে, এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে। আপনার জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।