আমাদের সুস্থ থাকার জন্য শুধু একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পুষ্টিকর খাদ্য এবং পরিচ্ছন্নতা নয়, বরং বিনোদনও অপরিহার্য। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গান শোনা এবং গান গাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ছোটবেলায় যদি কেউ বাদ্যযন্ত্র শিখে থাকেন, যেমন গিটার, তবলা, হারমোনিয়াম বা পিয়ানো, তবে সেটির সুফল অনেক বছর পরেও তাকে প্রভাবিত করে। সঙ্গীতের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, তাই এটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গান শোনা বা সঙ্গীতের উপকারিতা
১. আলসেমি কমানোর জন্য সঙ্গীত
যখন কাজ করার ক্ষেত্রে আলসেমি আসে, তখন দ্রুত বিটের গান শোনার মাধ্যমে আলসেমি দূর করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ব্যায়াম করার সময় দ্রুত বিটের গান শুনলে দেখা যায় যে, আলসেমি দ্রুত কেটে যায় এবং ব্যায়ামের গতিও বৃদ্ধি পায়।
২. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
নিয়মিত গান শোনার মাধ্যমে আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য হয়। গান শুনলে নেতিবাচক আবেগ নিয়ন্ত্রণে আসে এবং কর্টিসোল হরমোনের নিঃসরণ কমে, যা মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।
৩. হার্ট সুস্থ রাখার উপায়
কিছু ইউরোপীয় গবেষক জানিয়েছেন, গান শোনার মাধ্যমে আপনার মন ভালো থাকে এবং রক্তের প্রবাহ সঠিকভাবে চলে, ফলে আপনার হার্ট সুস্থ থাকে।
৪. স্ট্রোকের রোগীদের সাহায্য
স্ট্রোকের রোগীরা যারা নিয়মিত তাদের প্রিয় গান শোনেন, তাদের স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে এবং বিষণ্ণতা কমে যায়।
৫. পারকিনসন্স রোগীদের উন্নতি
পারকিনসন্স রোগীরা গান শোনার অভ্যাস করলে তাদের কথা বলা এবং চলাফেরা করা সহজ হয়।
৬. শিশুদের জন্য উপকারী
যেসব শিশু বাদ্যযন্ত্র শিখছে, তাদের গণিত ও বিজ্ঞানে ভালো ফলাফল দেখা যায়। তাদের চিন্তাশক্তি বেশি হয় এবং দ্রুত নতুন শব্দ শিখতে পারে।
৭. একাকিত্ব দূর করে
গান শোনার মধ্যমে একাকিত্ব দূর হয়। যদি একা কোণো কাজ করেন তাহলে গান শুনতে পারেন এতে একাকিত্ব দূর করে।
সঙ্গীতের স্নায়ু এবং মানসিক চাপের ওপর প্রভাব
মানসিক চাপ বর্তমান জীবনের একটি বড় সমস্যা। বিভিন্ন থেরাপি যেমন ম্যাসেজ এবং রিল্যাক্সেশন চাপ কমাতে সাহায্য করে। মিউজিক থেরাপি এর মধ্যে একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। ব্রিটেনের মাইন্ড ল্যাব ইন্টারন্যাশনাল গবেষণা করে দেখিয়েছে যে, সঙ্গীত চাপ কমাতে একটি কার্যকর উপায়।
মনোবিজ্ঞানী ডেভিড লুইসের নেতৃত্বে একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, গান শোনা চাপ কমাতে সবচেয়ে কার্যকর। কাজের চাপ বা উদ্বেগ থাকলে প্রিয় গান শুনলে মন প্রশান্ত হয়।
গান এবং মস্তিষ্ক
গান মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশকে সক্রিয় করে এবং মনোযোগ ও সৃজনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, সঙ্গীত মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বয়স্কদের ব্রেন স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গান সহায়ক।
সঙ্গীত থেরাপি
গান শোনা শারীরিক ব্যথা কমাতে এবং দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। যুক্তরাজ্যের গবেষণায় দেখা গেছে, মিউজিক থেরাপির মাধ্যমে আর্থ্রাইটিস রোগীদের ব্যথা এবং বিষণ্ণতা কমানো সম্ভব।
গাছের বৃদ্ধি এবং শিশুদের শান্ত রাখা
মিউজিক্যাল পরিবেশে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। শিশুরা গান শুনলে দ্রুত শান্ত হয়ে পড়ে, যা তাদের মনের অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
গান গাওয়ার উপকারিতা
১. ত্বকের স্বাস্থ্য
গান গাওয়ার সময় ত্বকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ বাড়ে, ফলে ত্বকের বয়স কমে এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
২. মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি
গান গাওয়ার সময় মস্তিষ্কে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যা মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নতি
গান গাওয়ার সময় শরীরে ইমিউনোগ্লোবিউলিন-এ এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।
৪. পারকিনসন্স রোগের চিকিৎসা
পারকিনসন্স রোগীদের গান গাওয়ার অভ্যাস করলে তাদের কথার স্পষ্টতা এবং চলাফেরা উন্নত হয়।
৫. শরীরচর্চা হিসেবে গান
গান গাওয়ার মাধ্যমে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ভোকাল কর্ড শক্তিশালী হয়।
৬. স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদ কমায়
গান গাওয়ার সময় এন্ডরফিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যা মানসিক চাপ কমায় এবং মনকে উৎফুল্ল রাখে।
গান বাজানোর ক্ষেত্রে বিশেষ দ্রঃ
উচ্চ স্বরে গান বাজানো, মানুষের ঘুমের সময় গান বাজানো, এবং হাসপাতালের কাছে গান বাজানো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে উচ্চ স্বরে গান বাজানো উচিত নয়। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারী ও বেসরাকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে উচ্চ স্বরে গান বাজানো বেআইনি এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীও প্রতিষ্ঠান চলা কালিন সময় উচ্চ স্বরে গান বাজানো, উচ্চ স্বরে গান বাজিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম ব্যাহত করা বেআইনি এতে ভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
পারলে গান একা শুনুন, যেমন হেডফোণ ব্যবহার করুন। এছাড়াও ভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন, বিয়ে, জন্মদিন, ইত্যাদি আরো অনেক অনুষ্ঠান আছে, যেখানে আমাদের বিনোদনের জন্য গান বাজানোর প্রয়োজন পড়ে, এজন্য সময় এবং স্থান বেছে নিন, এবং উচ্চ স্বরে গান না বাজিয়ে একটি নির্দিষ্ট ভলিয়মে রাখুন।
শেষ কথা
গান শোনা এবং গাওয়া আমাদের জীবনের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করে, আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং মানসিক চাপ কমায়। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে, যা আমাদের জীবনের আনন্দ ও সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।