জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে অনেকের প্রতি অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল অন্যতম। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তিনি ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করেছেন এবং গণহত্যায় জড়িতদের সমর্থন করেছেন। এর জন্য শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) তাকে ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়।
শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
শনিবার সকালে যখন ড. বাকী বিল্লাহ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন, তখন শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। তারা “ভুয়া ভুয়া” স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা দাবি করেন যে, তিনি আন্দোলনের সময়ে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর ফলে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, তিনি ছাত্র উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকাকালীন সময়েও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুক্ত করতে কোনো পদক্ষেপ নেননি। তারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, তিনি আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং তাদের তালিকা করে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন।
অধ্যাপকের মন্তব্য
অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে যাওয়ার দাবি জানায়। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে আমি বের হয়ে যাই। তারা আমার সাথে খারাপ আচরণ করেনি।” তিনি জানান, ক্যাম্পাসে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা থাকা সত্ত্বেও কেন তার সাথে বার বার এমন ঘটনা ঘটছে, তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তি
শিক্ষার্থীরা বলেন, যখন তারা আন্দোলন করছিল, তখন অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ প্রকাশ্যে তাদের বিরোধিতা করছিলেন। তিনি ৪ আগস্টের আন্দোলনকে “নৈরাজ্য” বলেও অভিহিত করেন। এমনকি, তিনি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের কাছে নির্দেশ দেন। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, এমন আচরণ একজন শিক্ষকের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
সমর্থন ও বিরোধিতা
বিভিন্ন শিক্ষকেরাও এই আন্দোলনে অংশ নিলেও ড. বাকী বিল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্ররোচনা দেন, যা শিক্ষার্থীদের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা এমন শিক্ষককে চাই না, যে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।”
শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও স্লোগান চলাকালে বিভাগের সভাপতি শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে ড. বাকী বিল্লাহকে ক্যাম্পাস থেকে বের হতে বলেন। এসময় বিভাগটির কয়েকজন শিক্ষক তাকে নিরাপদে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে যান। শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে পরিষ্কার অভিযোগ তুলেছেন যে, তিনি ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করার পরিবর্তে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
শেষ কথা
অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তারা আশা করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এই বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। ছাত্র আন্দোলন কখনও যুক্তিসঙ্গত ও মানবিকতার চেতনায় পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, একজন শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ তাদের পাশে থাকার পরিবর্তে বিরোধিতা করেছেন, যা কখনও গ্রহণযোগ্য নয়।