এইচআইভি (হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য বিষয় যা বিশ্বব্যাপী বহু মানুষকে প্রভাবিত করে। নারীদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের লক্ষণ কিছুটা আলাদা হতে পারে, যা বিভিন্ন ধরনের উপসর্গের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এখানে নারীদের মধ্যে এইচআইভি’র লক্ষণগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
লিম্ফ গ্রন্থি ফুলে যাওয়া
লিম্ফ গ্রন্থি, যা বাংলায় লসিকা গ্রন্থি হিসেবে পরিচিত, দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই গ্রন্থিগুলো সাধারণত গলা, মাথার পেছন, কুচকি, এবং বগলে অবস্থান করে। যখন এইচআইভি ভাইরাস দেহে প্রবেশ করে, তখন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই গ্রন্থিগুলো ফুলে যায়। যদিও লিম্ফ গ্রন্থির ফুলে যাওয়া শুধুমাত্র এইচআইভি’র লক্ষণ নয়, এটি অন্যান্য রোগ সংক্রমণেরও লক্ষণ হতে পারে। তাই যদি এই ধরনের কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
পাকস্থলীতে সমস্যা
যদি বেশিরভাগ সময়ই বমিভাব বা পেটের অস্বস্তি অনুভূত হয়, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে। পাকস্থলীর সমস্যা লেগেই থাকা এইচআইভির এক সাধারণ উপসর্গ হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা চলতে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি।
রজঃচক্রের পরিবর্তন
নারীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের ফলে রজঃচক্রে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। কিছু নারী পিরিয়ড হয়ে না থাকার সমস্যায় ভোগেন, আবার অন্যদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের পরিমাণ খুব কম বা খুব বেশি হতে পারে। এই ধরনের পরিবর্তনগুলি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে এটি এইচআইভির লক্ষণ হতে পারে।
ফুসকুড়ি
এইচআইভি’র আরেকটি সাধারণ লক্ষণ হল ফুসকুড়ি বা র্যাশ হওয়া। শরীরের বিভিন্ন স্থানে লালচে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে, যা চুলকানি বা অচুলকানি সহ হতে পারে। এটি অন্য অনেক ত্বকজনিত সমস্যার মতোই হতে পারে, তবে এইচআইভি সংক্রান্ত ফুসকুড়ির বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে।
চেষ্টা ছাড়াই ওজন কমা
এইচআইভি ভাইরাস দেহে প্রবেশের পর খাদ্যের চাহিদা কমে যায় এবং পুষ্টির শোষণ বাধাগ্রস্ত হয়, যার ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওজন কমে যেতে পারে। ওজন কমে যাওয়ার এই লক্ষণটি এইচআইভি’র একটি পরিচিত উপসর্গ।
ঘুম ঘুম ভাব
ক্লান্তি বা ঘুম ঘুম ভাব অনুভব করা সাধারণ হতে পারে, তবে এটি যদি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের পরও চলে না, তবে এটি এইচআইভি সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। এই ধরনের ক্লান্তি দেহের ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রমাণও হতে পারে।
জ্বর জ্বর ভাব
এইচআইভির প্রাথমিক পর্যায়ে ঠাণ্ডা, কাশি এবং হালকা জ্বর থাকতে পারে। জ্বর হওয়া মানে হল শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং নিজেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করছে। যদিও সাধারণ ভাইরাসের জন্য শরীরের এই পদ্ধতি কার্যকর, এইচআইভি ভাইরাসে তা প্রায়শই অপ্রতুল।
লক্ষণ না থাকলে কি হবে?
এইচআইভি ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন হালকা জ্বর, মাথাব্যথা, গলাব্যথা এবং শরীরে র্যাশ। তবে, অনেক সময় লক্ষণ দেখা নাও দিতে পারে এবং একজন ব্যক্তি দশ থেকে পনেরো বছরও বেঁচে থাকতে পারেন। লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে বেশ কিছু সময় লাগতে পারে, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকলে অন্যান্য উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
এইচআইভি সংক্রান্ত কিছু ভুল ধারণা
১. মশা দ্বারা ছড়ানো: মশা বা অন্য কোনো কীটপতঙ্গ দ্বারা এইচআইভি ছড়ায় না। মশা একজন আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত খেয়ে অন্য ব্যক্তির শরীরে ইনজেকশন দিতে পারে না, এবং এই ভাইরাস মশার শরীরে দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকে না।
২. অতীত ধারণা: ১৯৮০-এর দশকে অনেক ভুল ধারণা তৈরি হয়েছিল, যেমন আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন সম্পর্কের পর স্নান করলে ভাইরাস পরিষ্কার হয়ে যায়। এ ধরনের ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।
৩. নিরাপদ ব্যবহারের ভুল ধারণা: কনডম ব্যবহার করলে এইচআইভি থেকে পুরোপুরি সুরক্ষা পাওয়া যায় না। কনডম ফেটে গেলে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে, তাই নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা ও সচেতনতা অপরিহার্য।
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
এইচআইভি’র প্রতিরোধে কনডম ব্যবহারের পাশাপাশি নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আক্রান্ত ব্যক্তিরা যদি নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করেন, তবে তারা দীর্ঘদিন সুস্থ জীবন যাপন করতে পারেন। তবে অবহেলা করলে ভাইরাস আবার শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
শেষ কথা
নারীদের মধ্যে এইচআইভি’র লক্ষণগুলি বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে এবং এগুলোর মধ্যে কিছু সাধারণ লক্ষণও রয়েছে। তবে, এক্ষেত্রে সচেতনতা ও চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।